এমপক্স ভাইরাস এর লক্ষন

মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত প্রাণীজাত (জুনোটিক) রোগ। ১৯৫৮ সালে ডেনমার্কের একটি বিজ্ঞানাগারে এক বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়। এ রোগটির প্রাদুর্ভাব ১৯৭০ সাল থেকে প্রধাণত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ১১টি দেশে দেখা যায়। ইতিপূর্বে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তবে এর নাম শুনে মনে হতে পারে বানরই এ রোগের জন্য দায়ী, যা সঠিক নয়।

বানরই এ রোগের জন্য দায়ী?

ভাইরাসটি আসলে সংক্রমিত হয় ইঁদুর, বন্য কুকুর, কাঠবিড়ালি, বানর ও খরগোশের শরীর থেকে। ত্বকের ফোসকা সম্পূর্ণরূপে ভালো না হওয়া পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তি অন্যদের মধ্যে এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে লক্ষণ দেখা দেয়ার এক থেকে চার দিন আগে থেকেই অন্যদের মধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে।

ছড়ায় কীভাবে?

সংক্রমিত ব্যক্তির সরাসরি যেকোনো ধরনের সংস্পর্শ বা যৌনমিলনের মাধ্যমে, ব্যবহার করা কাপড়, সুই বা অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে, আক্রান্ত প্রাণী শিকার করা, কাটা বা রান্না করার সময়, কম তাপমাত্রায় আক্রান্ত প্রাণীর রান্না করা মাংস খেলে এমনকি আক্রান্ত গর্ভবতী মায়েদের থেকে তাদের অনাগত শিশুর কাছেও ভাইরাসটি যেতে পারে।

জটিলতা

সঠিক চিকিৎসা না হলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত, বিকৃত দাগ, সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, ব্রঙ্কোপনিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, কর্নিয়াল ইনফেকশন, অন্ধত্ব, সেপটিসেমিয়া, এনকেফালাইটিস ইত্যাদি হতে পারে।

প্রতিরোধ

আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। ব্যবহার করা কাপড় এবং অন্যান্য জিনিসপত্র স্পর্শ করা যাবে না। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শে আসা থেকে বিরত থাকুন। সংস্পর্শে এলে দ্রুত সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। প্রাণীর মাংস সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করে খেতে হবে। যদি রোগের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

এমপক্সের লক্ষণ

এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বেশকিছু লক্ষণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে শরীরে। এগুলো হলো-
১। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগীর শরীরে জ্বর থাকবে।
২। মাথা ব্যথা অনুভব হবে।
৩। পিঠ ও শরীর ব্যথা হবে।
৪। মাংসপেশীতে টান ও হাড়ে ব্যথা অনুভব হবে।
৫। শারীরিকভাবে রোগী দুর্বল অনুভব করবে।
৬। এমপক্সে আক্রান্ত রোগীর গুরুত্বপূর্ণ একটি লক্ষণ হলো শরীরে ফুসকুড়ি দেখা দেয়া।

প্রথমে রোগীর মুখে ফুসকুড়ি দেখা দিলেও পরে তা হাত ও পায়ের তলায় এমন কি শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ফুসকুড়িতে কখনও কখনও চুলকানি, পুজ ও ক্ষত সৃষ্টি হতে দেখা যায়।

এমপক্স রোগ ছড়ানোর প্রক্রিয়া

নতুন এ ভাইরাস কীভাবে একজন থেকে অন্যজনে ছড়ায়, তা জানাটা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমপক্স ভাইরাসটি একই সঙ্গে সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাহলো-

১। আক্রান্ত রোগীর সঙ্গে কথা বলার সময় তার শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে।
২। আক্রান্ত রোগীর ত্বকের সংস্পর্শে।
৩। আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিস ব্যবহার করলে।
৪। আক্রান্ত ব্যক্তির খাওয়া খাবার খেলে।
৫। আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কে জড়ালে।

তাই এমপক্স ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন। যতটা সম্ভব ব্যক্তিগত পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন।