‘ছোট অপারেশন’ শুনে খুশি মনে ওটিতে শিমুল

আপনার নাকের হাড় সামান্য বেড়ে গেছে, খুব বড় কোনো সমস্যা নয়, ছোট একটা অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে, মাত্র আধা ঘণ্টার অপারেশন’- চিকিৎসকের এমন কথা শুনে হাসতে হাসতে অপারেশন থিয়েটারে গিয়েছিলেন রোগী মো. সামছুদ্দোহা শিমুল। তবে তিনি আর বেঁচে ফেরেননি। কীভাবে বা কেন তার এমন মৃত্যু, সে বিষয়ে কোনো তথ্যই দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

২০ আগস্টের রাজধানীর কলাবাগানের কমফোর্ট হাসপাতালের ঘটনা এটি। ৩০ মিনিটের কথা বলে অপারেশন থিয়েটার থেকে ২ ঘণ্টায়ও বের করা হয়নি শিমুলকে। তখন তার পরিবার অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে পড়ে। গিয়ে দেখে তার নাক রক্তাক্ত। শ্বাসপ্রশ্বাস চলছে না।

এ ঘটনায় কলাবাগান থানায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর একটি মামলা হয়। মামলায় ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন, অধ্যাপক ডা. জাহীর আল-আমিন (৬২), ডা. ইফতেখারুল কাওছার (৩৭), কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড নার্সিং হোমের চেয়ারম্যান কবির আহামেদ ভূইয়া (৬০), কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিয়া ইসলাম (৫০)।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ১২ আগস্ট নাকের সমস্যা নিয়ে গ্রিন রোডের কমফোর্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড নার্সিং হোমে ডা. জাহীর আল-আমিনের কাছে যান শিমুল। তিনি শিমুলকে নাকের পলিপ অপারেশন করাতে বলেন। ছোট এই অপারেশনটি সর্বোচ্চ ৩০ মিনিটের মতো সময় লাগার কথাও জানান। তবে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়ার ২ ঘণ্টা পর তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।

এজাহারে বলা হয়, ১৯ আগস্ট শিমুলকে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেওয়া হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো আসে এবং তিনি অপারেশনের জন্য ফিট আছেন বলে রিপোর্টে জানা যায়। ২০ আগস্ট দুপুর ৩টায় শিমুলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ঘটনার বিষয়ে শিমুলের ভাগিনা মো. রিয়াজ ইসলাম বলেন, অপারেশনের জন্য রাত সোয়া ১১ টায় ওটিতে নিয়ে যায় এবং এনেস্থিসিয়া দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। রাত ১২টায় ছোট ছোট অনেকগুলো হাড়ের টুকরো এনে দেখিয়ে ডা. জাহীর জানান, মামার অপারেশন শেষ, ১০ মিনিট পর পোস্ট অপারেটিভ রুমে এনে রাখা হবে। তবে আমরা প্রায় আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরও মামাকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে আনা হয়নি। তাদেরকে বারবার জিজ্ঞাসা করলেও তারা সন্দেহজনক আচরণ করে এবং ইসিজি মেশিন ও অন্যান্য জিনিস নিয়ে ওটিতে প্রবেশ করেন।

এ ঘটনায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর মামলা দায়ের করা হলেও নিহতের পরিবার জানায়, তারা হত্যা মামলা দায়ের করতে চেয়েছিল। পুলিশ মামলায় হত্যার ধারা দেয়নি।

আসামি ২ জনের মধ্যে দুই চিকিৎসককে বৃহস্পতিবার আদালতে তুলে কারাগারে আটকের আবেদন করে পরিবার। তবে আদালত তাদের দুইজনকেই জামিন দেয়।

এদিকে প্রধান অভিযুক্ত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. জাহীর আল-আমিন ২০২০ সালে একজন রোগীর বাম কানে অপারেশনের জন্য ওটিতে নিয়ে ডান কানের অপারেশন করে ফেলেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিএমডিসির রেজিস্ট্রার ডাক্তার মো. লিয়াকত হোসাইন তাকে এক বছরের জন্য চিকিৎসা কাজ থেকে বিরত থাকার আদেশ দেন।