এতিম হয়ে পুলিশের চাকরি পাবো, স্বপ্নেও ভাবিনি

‘আমার বাবা ভিক্ষা করতেন, আর মা করতেন রাজমিস্ত্রির কাজ। সংসারে খুব অভাব থাকায় বাবা-মা আমাকে রেখে দেন এতিমখানায়। সেখানেই থাকতাম আমি। হঠাৎ একদিন আমার বাবা মারা যান। পরে আমার মা বিয়ে করে চলে যান অন্যত্রে। চিন্তায় ভেঙে পড়ি আমি, কী হবে আমার? কে দেখবে আমাকে? আমি পুলিশে চাকরি পাব স্বপ্নেও ভাবিনি।’

এভাবেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামে পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে নিয়োগপ্রাপ্ত মো. হাসানুর রহমান (১৯)। শুধু হাসানুর রহমান নন, কুড়িগ্রামে আরও ৫২ জন নারী পুরুষের চাকরি হয়েছে কনস্টেবল পদে। তারাও সবাই অনেক আনন্দিত চাকরি পেয়ে।

হাসানুর রহমান বলেন, সরকারি চাকরি কে না পেতে চায়, সবাই চায়। যার কপালে চাকরি থাকে তার হয়ে যায়। সেই সোনার হরিণটি পেয়েছি, কী যে ভালো লাগছে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার যে পুলিশে চাকরি হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমি দীর্ঘ ১৩-১৪ বছর থেকে এতিমখানায় লালিত পালিত হয়েছি। শুধু আমি না আমার বড় বোনও সেখানে মানুষ হয়েছেন। আজ যদি আমার ভিক্ষুক বাবা বেঁচে থাকতেন, কতই না আনন্দিত হতেন।

পুলিশে চাকরিপ্রাপ্ত হাসানুর রহমান কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সুখাতি বোর্ডঘর এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি নাগেশ্বরী পৌর শহরের কলেজপাড়া এলাকার গোলাপ খাঁ শিশু শোধন কেন্দ্র (এতিমখানা) লালিত পালিত হয়েছেন। স্থানীয় একটি স্কুল থেকে এসএসসি, নাগেশ্বরী সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর হাসানুর রহমান কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্সে ভর্তির জন্য আবেদনও করেছেন। এক বোন এক ভাইয়ের মধ্যে হাসানুর রহমান দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হয়েছে, স্বামীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন তিনি।

বৃহস্পতিবার কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার ও টিআরসি নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম কুড়িগ্রাম পুলিশ লাইন্স মাল্টিপারপাস ড্রিলশেডে আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরসি নিয়োগ কার্যক্রমের সব ইভেন্টে কৃতকার্য প্রার্থীদের লিখিত, মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে মেধাক্রম অনুযায়ী চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নাম ও ফলাফল ঘোষণা করেন এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

এ সময় শতভাগ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থী ও তাদের অভিভাবক অনেকে আবেগপ্রবণ হয়ে তাৎক্ষণিক অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম তার বক্তব্যে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণদের অভিনন্দন জানিয়ে সততা, নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্ব সঙ্গে দেশসেবার মনোভাব নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কাজ করার প্রেরণা দেন।

এ সময় অনুষ্ঠানে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য নীলফামারী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, আরআরএফ রংপুরের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মতিউর রহমান, কুড়িগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রার্থী ও তাদের অভিভাবক এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, কুড়িগ্রাম জেলার ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল ৫২ জনের শূন্য পদের বিপরীতে প্রিলিমিনারি স্ক্রিনিং শেষে ২৩০০+ প্রার্থী শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পান। শারীরিক মাপ, শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষা শেষে ৫৭৭ জন লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এবং লিখিত পরীক্ষায় ২৬৮ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়ে মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।

চূড়ান্তভাবে পুরুষ সাধারণ ২৬ জন, নারী ৫ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় পুরুষ ১৩ জন, নারী ২ জন, পুলিশ পোষ্য কোঠায় পুরুষ ৪ জন, নারী ১ জন এবং এতিম কোঠায় পুরুষ ১ জনসহ সর্বমোট ৫২ জনকে মনোনীত করে কুড়িগ্রাম জেলা টিআরসি নিয়োগ বোর্ড।x