বগুড়ায় ১০০ টাকা মণেও মিলছে না বেগুনের ক্রেতা

‘রোজার আগে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি করেছিলাম ২ হাজার টাকা। সেই বেগুন বিক্রি করতে হচ্ছে প্রতি মণ মাত্র ৪০০ টাকা, তাও কেউ কিনছে না।’ বগুড়ার শাজাহানপুরের খাদাশ পোয়ালগাছা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে বেগুনের আবাদ করেছিলেন তিনি। শাজাহানপুরের এ এলাকাটি বেগুন চাষের জন্য খুব প্রসিদ্ধ। বাইরের জেলার অনেক পাইকার সরাসরি জমাদারপুকুর থেকে বেগুন ক্রয় করে নিয়ে যান। কিন্তু হঠাৎ করে বেগুনের দরপতন হওয়ায় হতাশ নজরুল ইসলামের মতো অনেক কৃষক।

তিনি বলেন, রোজা শুরু হওয়ার এক সপ্তাহ আগেও বেগুনের দাম ভালো ছিল। এখন প্রতি কেজির দাম ১০ টাকা। কিন্তু ঢাকার পাইকাররা কিনতে আসছেন না। বেগুন পাঠাতেও নিষেধ করছেন। হাটে এই দামেও বেগুন কেনার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না।

একই এলাকার আরেক কৃষক আয়নাল হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষে ওষুধসহ সব মিলিয়ে খরচ হয় অন্তত ৫০ হাজার। প্রতিবার বেগুন তুলতে শ্রমিককে দিতে হয় ৪০০ টাকা। কিন্তু বাজার এমন হলে জমি থেকে বেগুন তোলাটা বৃথা। এজন্য জমি থেকে বেগুন গাছসহ তুলে ফেলেছেন আয়নাল হোসেন। সেখানে আপাতত বোরো ধান চাষ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার সব এলাকায় বেগুনের অস্বাভাবিক দরপতন হয়েছে। অনেক হাটে কৃষকরা বেগুনের দাম না পেয়ে সেখানেই ফেলে রেখে আসছেন। বেগুনের ফলন বেশি হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি রমজানের কারণে এ সবজির চাহিদা কমে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

এদিকে শেরপুরের সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের কৃষক তারিকুল ইসলাম বলেন আমি এই প্রথম ৫ মণ বেগুন তুলেছি। গত শনিবার বেগুনগুলো ৬০ টাকা খরচ করে চান্দাইকোনা পাইকারি বাজারে নিয়ে যাই। সেখানে ১ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছিল। এটা দেখে আমি আর বিক্রি করিনি। এর ১ ঘণ্টা পর ওই দামেও আর বেগুনের ক্রেতা ছিল না। এরপর বাজারেই বেগুন রেখে পালিয়েছি। মঙ্গলবার উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সবজির মোকামে বেগুন বিক্রি হয় প্রতি মণ ১০০ থেকে ৪০০ টাকায়। এছাড়া এদিন শাজাহানপুরের দুবলাগাড়ী হাটে প্রতি মণ বেগুন বিক্রি হয়েছে পাইকারি ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে।

বেগুনের হঠাৎ দরপতন নিয়ে কথা হয় মহাস্থানহাটের কৃষকদের নিয়ে গঠিত গ্রোয়ার্স মার্কেটের পরিচালক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার হাটে বেগুন ১০০ টাকা মণ বিক্রি হয়েছে। সবচেয়ে ভালো মানের বেগুনের দাম ছিল ৪০০ টাকা মণ। শুধু বেগুন নয়, সব সবজির চাহিদা কমে গেছে। মূলত রমজানের কারণে বাজারে সবজির চাহিদা কম। বেগুনের একই পরিস্থিতি। ঢাকা, চট্টগ্রামের পাইকাররাও বেগুন কিনছেন না।

আমিনুল ইসলাম আরও বলেন, আবার এবার বেগুনের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রায় সব কৃষকের জমিতেই বেগুন। কিন্তু রমজান মাস হওয়ায় তারা বিক্রি করতে পারছেন না। এজন্য অনেক কৃষক বেগুন নিয়ে ফিরে গেছেন। তবে কিছুদিনের মধ্যে এই পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে আশা করছি।

তবে বগুড়া শহরের ফতেহ আলী, কলোনী বাজারের একাধিক খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, একই বেগুনের দামের ফারাক অনেক। এসব বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা এই বেগুন বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে।

বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ফরিদুর রহমান বলেন, জেলায় ২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজির আবাদ হয়। এর মধ্যে বেগুনও রয়েছে। বগুড়ার প্রায় সব উপজেলায় বেগুনের আবাদ হয়। তবে শাজাহানপুর, কাহালু, সদর, গাবতলী উপজেলার কৃষকরা বেগুনের চাষ বেশি করেন। দাম ভালো থাকায় অনেক কৃষক বেগুন চাষ করেছেন। বেগুনের ফলনও ভালো হয়েছে। দাম এখন কম থাকলেও কিছু দিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে উঠবে।