মৌসুমি ফল হিসেবে জনপ্রিয় হচ্ছে ‘লটকন’

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে প্রাণপ্রকৃতি অতি মূল্যবান উপাদান। আমাদের প্রকৃতিক পরিবেশে আপন নিয়মে অনাদিকাল ধরেই উৎপাদিত হচ্ছে চেনা-অচেনা নানা জাতের ফল সম্ভার। এদের কোনো কোনোটাকে আমরা চিনি কিছুটা কম, কিছুটা ভালোভাবে। কোনো কোনো ফল আমাদের কাছে অল্প বিস্তর অজানা। কোনো কোনোটা আবার একেবারেই অচেনা।

লটকন আমাদের কাছে অল্প বিস্তর পরিচিত ফল। যেভাবেই হোক লটকন আমাদের কাছে অন্যান্য ফলের মতো ব্যাপক পরিচিত লাভ করে বিগত সময়গুলোতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। তবে ইদানিংকালে পরিচিতি পাচ্ছে এ ফলটি। দেশের কোনো কোনো অঞ্চলে এ ফলটির সদ্য পরিচিতির সুযোগটিকে কাজেও লাগাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করছেন তারা।

লটকনের রয়েছে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন ডাক নাম। বুবি, ডুবি, লটকা, নটকোনা, হাড়ফাটা, লটকাউ, কানাইজু, কিছুয়ান, আঁশফল প্রভৃতি নামে পরিচিত। প্রাপ্ত বয়স্ক একেকটি লটকন গাছ সাধারণত ৯ মিটার থেকে ১২ মিটার দৈর্ঘ্যের হয়ে থাকে।

বর্ষার অন্যতম ফল লটকন। এর স্বাদ টক-মিষ্টি। এখন এ ফলটি বাজারে বেশ দেখা যাচ্ছে। টক-মিষ্টির কারণে এ মৌসুমি ফলটি অনেকেই দারুন পছন্দ করেন। আমাদের গ্রামের এলাকায় এ ফলটির নাম বুবি। এ ফলটি সম্পর্কে অনেকেই হয়তো জানেন না, লটকন এক সময় আমাদের প্রকৃতির অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল। বুনো পরিবেশে বা গাছগাছালিঘেরা প্রকৃতির নির্জনে এটি ওয়াইল্ডলাইফ ডায়েট (বন্যপ্রাণীর খাবার) হিসেবে পরিচিত ছিল বেশ। কিন্তু বর্তমানে ফলটি তার পুষ্টিগুণের কারণে বাজারের অন্য ফলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

বর্তমানে লটকন বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। আমাদের দেশের নরসিংদী জেলাতে লটকনের ফলন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া সিলেট, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর এসব জেলায়ও ইদানিং বাণিজ্যিকভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। আমাদের মৌলভীবাজারের কোনো কোনো চাষি শৌখিনভাবে লটকনের চাষ শুরু করেছেন। আমাদের প্রকৃতির মৌসুমি ফল হিসেবে লটকন বর্তমানে সহজলভ্য ও সমৃদ্ধ একটি ফল।